পৃথিবীর হাজারো ধর্মের মাঝে ইসলামই সত্য ধর্ম বুঝবো কিভাবে?

 
এই আইকনে হয়ত ইসলামের কালাম ২ নং এ তা জন সংখ্যা হিসেব,
প্রশ্ন
আমি আমার এক নাস্তিক বন্ধুকে একদিন বলেছিলাম যে, সত্যকে গ্রহন করো। সে বলল, “পৃথিবীতে তো হাজার হাজার ধর্ম আছে। তো আমি এই হাজার হাজার ধর্ম থেকে কিভাবে সত্য ধর্ম খুঁজবো?  তাছাড়া তোমার ধর্মই যে সত্য এ কথা তুমি কি আমাকে প্রমাণ করে দেখাতে পারবে?”। এই প্রশ্নটা আমাকেও নাস্তিকতার দিকে ধাবিত করেছে। আমার নিজের কাছেই এখন মনে হয় আমার ধর্মই কি সঠিক?
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
ইসলাম সত্য ধর্ম হবার উপর অসংখ্য প্রমাণ বিদ্যমান।
আল্লাহ তাআলা মানুষকে বুদ্ধি বিবেক দিয়েছেন। সেই বিবেক বুদ্ধি দিয়ে যাচাই করলে। সেই সাথে সকল ধর্মমতের ধর্মীয় গ্রন্থগুলো যাচাই করলেই সেই সত্য প্রকাশিত হয়ে যাবে।
যেহেতু ধর্ম একটি জীবন ব্যবস্থা। চাই ধর্মগ্রন্থ না থাকলে সেটি মূলত কার্যকরী ধর্ম হিসেবে বাকি থাকে না। তাই যেসব ধর্মের ধর্মীয় গ্রন্থ রয়েছে আমরা প্রথমে সেসবকে ধর্ম হিসেবে ধরে নিতে পারি।
তারপর সেগুলোকে আল্লাহর দেয়া বুদ্ধি বিবেক ও যুক্তি দিয়ে যাচাই করতে পারি।
যদি আকল সঠিকভাবে কাজ করে, তাহলে অবশ্যই ইসলাম সত্য ধর্ম তা প্রমাণিত হয়ে যাবে।
কয়েকটি উদাহরণ উপস্থাপন করা হল,
আপনি উক্ত ভাইটিকে বলুন! চলুন আমরা ইসলাম ও অন্যান্য ধর্মীয় গ্রন্থগুলো নিয়ে আলোচনা করি। যুক্তির বিচারে যে ধর্ম সত্য হবে, আমরা সেটিকেই মানবো।
ইসলামই ধর্ম সত্য হবার প্রমাণ-১
কোন ধর্মগ্রন্থ তার ধর্মকে সবার জন্য ধর্ম হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেছে?
যে ধর্মগ্রন্থে তাদের ধর্মকে সবার ধর্ম হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেছে, আমরা কেবল সেই ধর্মই মানবো। আর বাকিগুলোর ক্ষেত্রে বুঝে যাবো, সেগুলো সবার জন্য নয়, বরং নির্দিষ্ট জাতি গোষ্ঠির জন্য সীমাবদ্ধ ধর্ম।
এ বিষয়ে একমাত্র ইসলামই টিকে যাবে। আর কোন ধর্ম টিকবে না। কারণ ইসলামের ধর্মগ্রন্থ কুরআন ছাড়া আর কোন ধর্মগ্রন্থে তাদের ধর্মকে সমগ্র মানবজাতির জন্য প্রেরণ করা হয়েছে কথাটি নেই। কেবল ইসলাম ধর্মের ধর্মগ্রন্থ কুরআনেই একথাটি বিদ্যমান।
ইহুদীদের ধর্মগ্রন্থ তৌরাত। উক্ত তৌরাতের ৫টি অংশ। যথা-পয়দায়েশ, হিজরত, লেবীয়, শুমারী ও দ্বিতীয় বিবরণ এর কোথাও মুসা আঃ ও ইহুদী ধর্ম সমগ্র মানবজাতির জন্য প্রেরিত হবার কথা নেই। বরং বারবার শুধু বনী ইসরাঈলীদের কথাই বর্ণিত হয়েছে।
যা দ্বারা পরিস্কার যে, ইহুদী ধর্ম সমগ্র মানবজাতির জন্য নয়, বরং শুধুই বনী ইসরাঈলীদের জন্যই প্রেরিত হয়েছে।
যদি খৃষ্টানদের ইঞ্জিল খুলেন। ইঞ্জিলের মোট চারটি পার্ট রয়েছে, যথা মথি, মার্ক, লুক ও ইউহান্না।
কোথাও একথা বর্ণিত হয়নি যে, খৃষ্ট ধর্ম সমগ্র মানবজাতির জন্য প্রেরিত হয়েছে। বরং পরিস্কার শব্দে সেখানে এসেছে যে, তা শুধু বনী ইসরাঈলীদের জন্য এসেছে।
উদাহরণত:
ঈসা সেই বারজনকে এ সমস্ত আদেশ দিয়া পাঠাইলেন, “তোমরা অ-ইহুদীদের নিকট বা শমরীয়দের কোন গ্রামে যাইও না, বরং ইস্রায়েল জাতির হারান মেষদের নিকটে যাইও। {ইঞ্জিল শরীফ, মথি-১০:৫-৭]
আরেক স্থানে এসেছেঃ
একজন কেনানীয় স্ত্রীলোক এসে চিৎকার করে বলতে লাগল, “হে প্রভু, দাউদের বংশধর,আমার উপর রহম করুন। ভূত আমার মেয়েটিকে ভীষণ ভাবে ধরিয়াছে।”
ঈসা কিন্তু তাহাকে একটা কথাও বলিলেন না। তখন তাহার সাহাবীরা আসিয়া অনুরোধ করিয়া বলিলেন, “উহাকে বিদায় করিয়া দিন, কারণ সে আমাদের পিছনে চীৎকার করিতেছে”।
উত্তরে ঈসা বলিলেন, আমাকে কেবল ইস্রায়েল বংশের হারান মেষদের নিকটেই পাঠান হইয়াছে।” [ইঞ্জিল শরীফ, মথি ১৫: ২২-২৪]
তাছাড়া হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের কোথাও তাদের ধর্মকে সমগ্র মানবজাতির জন্য প্রেরিত হবার কথা বর্ণিত হয়নি।
কিন্তু কুরআনে কারীমের একাধিক স্থানে ইসলাম ধর্মকে সমগ্র মানবজাতির জন্য প্রেরিত হবার প্রমাণ নিহিত। যেমন-
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَالَمِينَ [٢١:١٠٧
আমি আপনাকে সমগ্র সৃষ্টিজগতের জন্যে রহমত স্বরূপই প্রেরণ করেছি। [সূরা আম্বিয়া, ২১: ১০৭]
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا كَافَّةً لِّلنَّاسِ بَشِيرًا وَنَذِيرًا وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ [٣٤:٢٨
আমি আপনাকে সমগ্র মানবজাতির জন্যে সুসংবাদাতা ও সতর্ককারী রূপে পাঠিয়েছি;কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না। [সূরা সাবা, ৩৪:২৮]
উপরোক্ত আয়াত ছাড়াও আরো অনেক আয়াত আছে, যা প্রমাণ করে, ইসলামের নবী মুহাম্মদ সাঃ সমগ্র মানবজাতির প্রেরিত হয়েছেন। আর কোন নবী বা ধর্ম সমগ্র মানবজাতির জন্য প্রেরিত হয়েছে মর্মে ধর্মগ্রন্থগুলোতে উদ্ধৃত হয়নি।
যা প্রমাণ করে ইসলামই সবার জন্য বর্তমানে পালনীয় ধর্ম।
ইসলামই ধর্ম সত্য হবার প্রমাণ-২
ইসলাম ধর্মের ধর্মীয় গ্রন্থ কুরআন ছাড়া পৃথিবীর বুকে দ্বিতীয় কোন ধর্ম নেই, যে ধর্মের কিতাবটি যেভাবে নাজিল হয়েছে, তা তার আপন ভাষায় অবিকৃত অবস্থায় সর্বত্র পাওয়া যায়।
পৃথিবীর যেকোন প্রান্ত থেকে কুরআন তুলে নিন। আরব, আজম, স্প্যানিশ, ডেনিশ, ইরাক, ইরান, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, চিন, জাপান, উগান্ডা, আফ্রিকা, আমেরিকা, ফরাসী, যেকোন দেশে গমণ করুন। সারা বিশ্বের সর্বত্র কুরআন যে ভাষায় নাজিল হয়েছে, সেই ভাষায় হুবহু অবিকৃত আকারে সংরক্ষিত পাবেন।
কিন্তু ইহুদীদের তৌরাত, খৃষ্টানদের বাইবেল, হিন্দুদের বেদ আর বৌদ্ধদের ত্রিপিটক এমন পাবেন না। বরং তা কোন ভাষায় তাদের ধর্মের অবতারের উপর নাজিল হয়েছে? সে ভাষায় উক্ত কিতাবের কোন অস্তিত্বই পাবেন না।
আরেক একেক  ভাষায় একেক বাইবেল পাবেন। একেক ভাষায় একেক বেদ পাবেন।
এতদূর যেতে হবে না। আপনি তৌরাত ও যবুর ও ইঞ্জিলের বাংলাদেশী ভার্সনই একাধিক প্রকাশনীরটি খুলে দেখুন না। দেখবেন একটির ভাষা আরেকটির সাথে মিল নেই। প্রচুর গড়মিল।
কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ। ছুম্মা আলহামদুলিল্লাহ। পবিত্র কুরআনে তা পাবেন না। সারা বিশ্বের কুরআনের আরবী পাঠ একই। গুহার ভিতরে যদি কোন কুরআন পাওয়া যায়, সেই কুরআন, রাজ প্রসাদে থাকা কুরআন একই ভাষায়, একই শব্দে, একই সূরা আয়াতে উদ্ধৃত আছে।
কোন পরিবর্তন, পরিবর্ধন নেই।
যা পরিস্কার প্রমাণ করে, ইসলামই একমাত্র অবিকৃত ও সত্য ধর্ম।
ইসলামই ধর্ম সত্য হবার প্রমাণ-৩
সারা পৃথিবীতে কোন ধর্মের ধর্মীয় গ্রন্থের হাফিজ তথা পুরো কিতাব মুখস্ত এমন ব্যক্তি খুঁজে পাবেন না।
পবিত্র কুরআনের কোটি কোটি হাফিজ বিদ্যমান। পৃথিবীর যেকোন প্রান্ত থেকে হাফিজকে একত্র করুন। সকল হাফিজ একই শব্দে, একই পদ্ধতিতে পুরো কুরআন পড়ে শুনাবে। কিন্তু বাইবেল, বেদ বা ত্রিপিটকের এমন হাফিজ পৃথিবীর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না।
যা প্রমাণ করে, কুরআন ও ইসলাম সত্য ধর্ম। এ কারণে এ ধর্মগ্রন্থকে অবিকৃত রাখা হয়েছে। এর সংরক্ষণ করা হয়েছে কোটি মানুষের সিনায় মুখস্তের মাধ্যমে সংরক্ষিত করে।
ইসলামই ধর্ম সত্য হবার প্রমাণ-৪
পৃথিবীর কোন ধর্মের অবতার কিভাবে জীবনাচার চালিয়েছেন? কিভাবে সংসার চালিয়েছেন? কিভাবে ইবাদত করতেন? কিভাবে ব্যবসা করতেন? কিভাবে সমাজ চালাতেন? কিভাবে বিচার করতেন?
এক কথায় তার জীবনের পূর্ণাঙ্গ দিক নির্ভর হালাত, বিশুদ্ধ সূত্রসহ বর্ণিত হয়নি।
কিন্তু ইসলামই একমাত্র ধর্ম। যার নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিভাবে বাথরুমে যেতেন, কিভাবে গোসল করতেন, কিভাবে বিয়ে করেছেন? কিভাবে সংসার চালাতেন? কিভাবে যুদ্ধ করেছেন? কিভাবে ব্যবসা করেছেন? আখলাক কেমন? কিভাবে ইবাদত করতেন? মোটকথা, তার পূর্ণাঙ্গ জীবনের প্রতিটি হালাত, পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সঠিক ও বিশুদ্ধ সূত্রসহ সংরক্ষিত আছে।
আর কোন ধর্মের অবতারের ক্ষেত্রে তা বিদ্যমান নেই।
যদি বলা হয়, ঈসা আঃ ও মুসা আঃ নামায কিভাবে পড়তেন? রুকুতে গিয়ে কী পড়তেন? এর কোন জবাব ইহুদী ও খৃষ্টানরা দিতে পারবে না।
একই হালাত হিন্দু ও বৌদ্ধদের। তারাও তাদের অবতারের পূর্ণ  জীবন বিশুদ্ধ সূত্র উল্লেখ করে বর্ণনা করতে পারবে না। কিন্তু মুসলমানদের নবীর সর্ব হালাত, বিশুদ্ধ সূত্রসহ সংরক্ষিতি আছে।
যা প্রমাণ করে ইসলামই একমাত্র বিশুদ্ধ ধর্ম।
ইসলামই ধর্ম সত্য হবার প্রমাণ-৫
ইসলাম ধর্ম ছাড়া আর কোন ধর্ম গ্রন্থে মানুষের জীবন চলার পূর্ণাঙ্গ কোন বিবরণ নেই। সমাজ, পরিবার, রাষ্ট্র, বিয়ে, তালাক, মিরাছ, ব্যবসা, বাণিজ্য, এক কথায় একটি মানুষ কিভাবে চলবে? কিভাবে জীবন যাপন করবে? কিভাবে খাবে? কিভাবে কামাই করবে? কিভাবে সংসার করবে? কিভাবে ব্যবসা করবে? কিভাবে যুদ্ধ করবে? কিভাবে ইবাদত করবে?
এসব কিছু বিশদ আকারে কোন ধর্ম গ্রন্থে বর্ণিত হয়নি। বরং ইহুদী, খৃষ্ট, হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্ম শুধু কিছু আচার অনুষ্ঠানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। মানুষের জীবন ঘনিষ্ট যুগ জিজ্ঞাসার কোন জবাব বিদ্যমান নেই।
বিশ্বাস না হলে, তৌরাত, ইঞ্জিল, বেদ, গীতা আর ত্রিপিটক খুলেই দেখুন না।
এসব গ্রন্থে কিছু নীতি বাক্য ছাড়া আর কিছুই নেই। মানুষের জীবন চলার পথের যুগ সমস্যার কোন সমাধানই বিদ্যমান নেই।
কিন্তু ইসলাম এমন ধর্ম নয়। ইসলাম ধর্মের ধর্মীয় গ্রন্থ ও এ ধর্মের নবী থেকে মানুষের পূর্ণ জীবনের বিধানাবলী,  জীবন ঘনিষ্ট সকল সমস্যার সমাধান নবী পর্যন্ত বিশুদ্ধ সূত্রসহ উল্লেখ করা আছে।
যা প্রমাণ করে, ইসলামই একমাত্র মানবতার সমাধান। সকল মানুষের জন্য নাজিলকৃত ধর্ম। ইসলামই একমাত্র নির্বাচিত ধর্ম।
ইসলামই ধর্ম সত্য হবার প্রমাণ-৬
ইসলাম ধর্মেরই অবিকৃত ঐশী গ্রন্থ বিদ্যমান। আর কোন ধর্মের ঐশী গ্রন্থ অবিকৃত অবস্থায় বিদ্যমান নেই।
সহজ লজিক হলঃ যেটি স্রষ্টার নাজিলকৃত কিতাব হবে, সেটির মাঝে যার উপর নাজিল হল, তার মৃত্যুর সময়, মৃত্যুর ঘটনা, তার কবরের বিবরণ ইত্যাদি থাকবে না।
যদি এসব থাকে, তাহলে বুঝতে হবে এটি স্রষ্টার নাজিলকৃত কিতাব নয়। বরং পরবর্তীতে লিখিত ব্যক্তির জীবনী।
উদাহরণতঃ
আমরা জানি, তৌরাত কিতাব হযরত মুসা আঃ এর উপর নাজিল হয়েছে। যেটি তার উপর নাজিল হয়েছে, উক্ত কিতাবে তার মৃত্যুর বিবরণ কিছুতেই থাকতে পারে না। যদি তা বিদ্যমান থাকে, তাহলে বুঝা যাবে, তা তার উপর নাজিলকৃতি ঐশীবানীময় কিতাব নয়। বরং পরবর্তীতে লিখিত মুসা আঃ এর জীবনীগ্রন্থ।
অথচ তৌরাতে দেখুনঃ
মাবুদ যা বলেছিলেন সেই অনুসারে মাবুদের গোলাম মুসা ঐ মোয়াব দেশেই ইন্তেকাল করলেন। মোয়াব দেশের বৈৎ পিয়োরের কাছে যে উপত্যাকা ছিল সেখানে মাবুদই তাকে দাফন করলেন।, কিন্তু তার কবরটা যে কোথায় তা আজ পর্যন্ত কেউ জানে না। ইন্তেকাল করবার সময়ে মুসার বয়স ছিল একশো বিশ বছর। তখনও তার দেখবার শক্তি দুর্বল হয়নি কিংবা তার গায়ের জোরও কমে যায়নি। বনি ইসরাইলরা মোয়াবের সমভূমিতে ত্রিশ দিন পর্যন্ত মুসার জন্য কান্নাকাটি করেছিল। [তৌরাত, দ্বিতীয় বিবরণ ৩৪:৫-৮]
তৌরাতের এসব বিবরণ পরিস্কার প্রমাণ করে, বর্তমানের বিদ্যমান তৌরাত মুসা আঃ এর উপর নাজিলকৃত ঐশী গ্রন্থ নয়। বরং পরবর্তী কারো লিখিত মুসা আঃ এর জীবনী গ্রন্থ। জীবনী গ্রন্থেই কেবল মৃত্যুর সময়, এবং কোথায় দাফন করা হয়েছে? মৃত্যুর পর তার উম্মতের কী করেছেন? তা বিধৃত হয়। যে মারা গেছেন, তার জীবদ্দশায় নাজিলকৃত কিতাবে এসব আসতেই পারে না।
বুঝা গেল, বর্তমানের তৌরাত মূলত মুসা আঃ এর জীবনী গ্রন্থ। তার উপর নাজিলকৃত ঐশী কিতাব নয়।
আগ্রহী পাঠকগণ নিজেই যাচাই করে দেখতে পারেন। বর্তমানের তৌরাতকে কিছুতেই ঐশী গ্রন্থ মনে হবে না, বরং তা নিরেট মুসা আঃ এর জীবনী গ্রন্থ বলেই প্রতিয়মান হবে।
একই অবস্থা ঈসা আঃ এর উপর নাজিলকৃত ইঞ্জিলের বর্তমান ভার্সনের। বাংলাদেশসহ বিশ্বের যেকোন ভাষায় প্রচারিত ঈঞ্জিল বইটি খুলুন, দেখবেন এটা মূলত ঐশী কিতাব নয়। বরং তা ঈসা আঃ এর জীবনী গ্রন্থ মাত্র।
কারণ ঐশীগ্রন্থ যার উপর নাজিল হল, তার মৃত্যু সংবাদ, কবরের বিবরণ আসতে পারে না, কিন্তু বর্তমানের বিদ্যমান ইঞ্জিলে তা আছে।
যেমন-
“সন্ধ্যা হলে পর অরিমাথিয়া গ্রামের ইউসুফ নামে একজন ধনী লোক সেখানে আসলেন। ইনি ঈসার উম্মত হয়েছিলেন।
পীলাতের কাছে গিয়ে তিনি ঈসার লাশটা চাইলেন। তখন পীলাত তাকে সেই লাশটা দিতে হুকুম দিলেন।
ইউসুফ ঈসার লাশটা নিয়ে গিয়ে পরিস্কার কাপড়ে জড়ালেন, আর যে নতুন কবর তিনি নিজের জন্য পাহাড়ের মধ্যে কেটে রেখেছিলেন সেখানে সেই লাশটা দাফন করলেন। পরে সেই কবরের মুখে বড় একটা পাথর গড়িয়ে দিয়ে তিনি চলে গেলেন।” [ইঞ্জিল, মথি, ২৭:৫৭-৬০, মার্ক, ১৫: ৪২-৪৭, লূক, ২৩: ৫০-৫৩, ইউহোন্না, ১৯: ৩৮-৪২]
একই অবস্থা দেখতে হিন্দু ও বৌদ্ধতের ধর্মীয় গ্রন্থগুলোতে। কিন্তু ইসলামের ধর্মগ্রন্থ এমন নয়। এখানে উক্ত ধর্মের নবী মারা যাবেন একথা বিদ্যমান আছেন? কিন্তু কোথায় মারা গেছেন? কিভাবে মারা গেছেন? কবর কোথায়? তা ধর্মগ্রন্থ কুরআনে বিদ্যমান নেই।
অন্যান্য ধর্মের ধর্মগ্রন্থ আর মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ খুললেই যেকোন আকলমন্দ মানুষের বিবেক বলে দিবে, কোনটি অবিকৃত ঐশীগ্রন্থের মর্যাদা রাখে, আর কোনটি রাখে না।
ইসলামই ধর্ম সত্য হবার প্রমাণ-৭
ইসলাম ধর্মের ধর্মীয় ঐশী গ্রন্থ পবিত্র কুরআন। যা একমাত্র ঐশীগ্রন্থ যাতে কোন অবৈজ্ঞানিক কথা নেই। যাতে এমন অসংখ্য বিষয় রয়েছে, যা হাজার বছর পূর্বে কুরআনে উদ্ধৃত হয়েছে।  কিন্তু কুরআন নাজিলের অনেক পর বৈজ্ঞানিকরা তা আবিস্কার করেছেন।
যা কুরআনকে সর্ববিষয়ে অবগত স্রষ্টার নাজিলকৃত বাণী হবার পরিস্কার স্বীকৃতি প্রদান করে। যেমন
বিগব্যাং
সমগ্র বিশ্ব ছিল একটি বস্তুপূঞ্জ। পাইমারী নেবুলা। তারপর বিগ ব্যাং অর্থাৎ একটা বড় বিস্ফোরণ হল, দ্বিতীয় বার সেফারেট হল, যাতে গ্যালাক্সি বা নক্ষত্রপূঞ্জের সৃষ্টি হল।
এই বিগ ব্যাং থিউরী আবিস্কারের ফলে ১৯৭৩ ঈসাব্দে দু’জন বিজ্ঞানীকে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়।
অথচ সাড়ে চৌদ্দশত বছর পূর্বেই ইসলামের ধর্মীয় গ্রন্থ পবিত্র কুরআনে এ বিগ ব্যাংগের কথা উদ্ধৃত হয়েছে-
أَوَلَمْ يَرَ الَّذِينَ كَفَرُوا أَنَّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ كَانَتَا رَتْقًا فَفَتَقْنَاهُمَا ۖ وَجَعَلْنَا مِنَ الْمَاءِ كُلَّ شَيْءٍ حَيٍّ ۖ أَفَلَا يُؤْمِنُونَ [٢١:٣٠
কাফেররা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী এস সঙ্গে যুক্ত ছিল,অতঃপর আমি উভয়কে খুলে দিলাম [সূরা আম্বিয়া, ২১: ৩০]
মাত্র ৫০ বা একশত বছর আগে যে থিউরী মাত্র আবিস্কৃত হল, সেই থিউরী হাজার বছর পূর্বে কোন গ্রন্থে থাকা প্রমাণ করে, উক্ত বিষয়টি স্রষ্টার কিতাব ছাড়া মানব রচিত কিতাব হতেই পারে না।
চাঁদের নিজের কোন আলো নেই!
চাদের নিজেস্ব আলো আছে কি না? তা বিজ্ঞান আবিস্কার করেছে এইতো সেদিন। কিন্তু পবিত্র কুরআন তা সাড়ে চৌদ্দশত বছর আগেই জানিয়ে দিয়েছে, চাদের নিজের আলো নেই। বরং তা অন্যের থেকে ধার করা প্রতিফলিত আলো।
تَبَارَكَ الَّذِي جَعَلَ فِي السَّمَاءِ بُرُوجًا وَجَعَلَ فِيهَا سِرَاجًا وَقَمَرًا مُّنِيرًا [٢٥:٦١
কল্যাণময় তিনি,যিনি সৃষ্টি করেছেন নক্ষত্রপুঞ্জ এবং সেখানে একটি প্রদীপ স্থাপন করেছেন, এবং একটি চাঁদ যার প্রতিফলিত আলো আছে। [সূরা ফুরকান, ২৫: ৬১]
চাঁদ ও সূর্য স্থীর নয়!
বিজ্ঞানের আবিস্কার হল, চাঁদ ও সূর্য একেকটি গ্রহ। যা স্থীর নয়। অথচ একই কথা হাজার বছর পূর্বে পবিত্র কুরআনে বিধৃত হয়েছে। এটি স্রষ্টার বাণী না হলে, বিজ্ঞানীদের আবিস্কারের আগেই তা কিভাবে বলে দিল?
দেখুনঃ
وَهُوَ الَّذِي خَلَقَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ ۖ كُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ [٢١:٣٣
তিনিই সৃষ্টি করেছেন রাত্রি ও দিন এবং সূর্য ও চন্দ্র। সবাই আপন আপন কক্ষপথে বিচরণ করে। [সূরা আম্বিয়া-২১: ৩৩]
প্রতিটি জীবন্ত প্রাণী পানি থেকে সৃষ্ট!
আজ তা বৈজ্ঞানিক সত্য। কিন্তু একথা সাড়ে চৌদ্দশত বছর আগেই পবিত্র কুরআনে বিদ্যমান।
وَجَعَلْنَا مِنَ الْمَاءِ كُلَّ شَيْءٍ حَيٍّ ۖ أَفَلَا يُؤْمِنُونَ [٢١:٣٠
এবং প্রাণবন্ত সবকিছু আমি পানি থেকে সৃষ্টি করলাম। এরপরও কি তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না? [সূরা আম্বিয়া-২১: ৩০]
বিজ্ঞানের বিভিন্ন থিউরী উল্টে গেছে, কিন্তু পবিত্র কুরআনে বর্ণিত কোন থিউরীই উল্টানো যায়নি। যা প্রমাণ করে পবিত্র কুরআন, কোন মানবরচিত গ্রন্থ নয়। বরং স্রষ্টার নাজিলকৃত কিতাব।
এরকম আরো অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে। যা যেকোন বিবেকবান ব্যক্তিকে ইসলাম ধর্মই একমাত্র অবিকৃত ও ঐশী ধর্ম বলে প্রমাণ করবে।
তারপরও যদি কারো ইসলাম ধর্মকে সত্য ধর্ম হিসেবে মানতে সমস্যা হয়, তাহলে তাকে কপালপোড়া এবং হতভাগা ছাড়া আর কী’বা বলতে পারি?
আল্লাহ তাআলা আপনাকে হক দ্বীন গ্রহণও সে অনুযায়ী আমল করার তৌফিক দান করুন।
বদ্বীনী জীবন, ফাসিক বন্ধু আপনার ঈমানের জন্য বিপদজনক। তাই ফাসিক বন্ধুর সংশ্রব এবং গোনাহের কাজ ছেড়ে দিন। দ্বীনী কাজের সাথে সম্পৃক্ত হোন।
সুযোগ হলে, তাবলীগের তিন চিল্লা দিয়ে আসুন। হ্ক্কানী পীর মাশায়েখ বা বিজ্ঞ আলেম উলামাদের সাথে সম্পর্ক রাখুন।
ইনশাআল্লাহ আল্লাহ তাআলা আপনার ঈমানকে হিফাযত করবেন। আর সর্বদা দুআ করুন-
رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِن لَّدُنكَ رَحْمَةً ۚ إِنَّكَ أَنتَ الْوَهَّابُ [٣:٨
হে আমাদের পালনকর্তা! সরল পথ প্রদর্শনের পর তুমি আমাদের অন্তরকে সত্যলংঘনে প্রবৃত্ত করোনা এবং তোমার নিকট থেকে আমাদিগকে অনুগ্রহ দান কর। তুমিই সব কিছুর দাতা। [সূরা আলেইমরান-৩: ৮]
والله اعلم بالصواب




উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা-ইমাম আবূ হানীফা ইসলামী রিসার্চ সেন্টার পিরোজপুর।
ইমেইল– ahlehaqmedia2014@gmail.com